Uncategorized

পটোয়া বা কুমোর- লোকে তাদেরও শিল্পী বলে

পটোয়া বা কুমোর- লোকে তাদেরও শিল্পী বলে। কিন্তু পটোয়া বা কুমোর – যারা মূর্তীর কারিগর তাদের কাজ জলেই বিসর্জন হয়।

‘আমি বাপু একটাই ছবি বানাব, আর সারা নাম কামাব। আমাকে নিয়েই তুমি করবে চর্চা’- অ্যালবার্ট অশোক

ছবি ভাস্কর্য নিয়ে আপনার কি ধারণা?বাংলাতে এবং বাংলাদেশে বাংলাভাষী ধরুন ১০+১৫= ২৫কোটি বাংগালী। সবাই ছবি ভাস্কর্য নাটক গান নাচ, সাহিত্য ইত্যাদি করেনা। কিন্তু তামাসা দেখার লোক একটা অংশ আছে যাদের আমরা বলি দর্শক বা শ্রোতা।


আমি যদি মোটামুটি অংকের হিসাবে আসি, ও দেখতে চাই শিল্পী কতজন শিল্পানুরাগী কতজন ও সাধারণ যাদের সারাদিনে সাংস্কৃতিক জগতের পরিবেশ বা আবহাওয়াতে থাকেননা। ধরুন, ২৫ কোটি = ১০০ জন লোকের মধ্যে গান, নাচ, নাটক, সিনেমা ছবি ও ভাস্কর্য ইত্যাদির সুযোগ ঘটেনা, বা উপেক্ষা করে চলেন গ্রামে গঞ্জে ও নিম্নতম বিত্তের শ্রমিক, চাষা ও স্বাধীন পেশার অশিক্ষিত ও নিরক্ষর হলেন ৭৫ জন। আর ২৫ জনের সাথে বিত্তের ও বিলাসের কিছু সময় আছে, তারা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যৌনতার সাথে জড়াতে চান। কিছু কবি – যারা নিজেকে কবি বলে যশপ্রার্থী বা শিল্পী। অভিনেতা, নাট্যকার, গায়ক, নর্তক ইত্যাদি যশপ্রার্থী তাদের যে সংখ্যা ধরুন শতকরা ৮০ জন বিপরীত লিংগের সাথে যৌনসম্ভোগের আশায় একটা মুখোশ পরে নানা জায়গায় কবিতাপাঠ, ছবির প্রদর্শনী। বা কিশোর কন্ঠী /লতা কন্ঠী বা বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠিত গায়কের নকল করে গাইতে যান। এ করা পয়সা পাওয়া যায়না উলটো গাঁটের পয়সা খরচ হয়। কিন্তু পরোয়া নেই। একটা বিপরীত লিংগের সাথে যুক্ত হতে পারলে কারো অর্থকড়ি কারুর যৌনসুখ ঘটে।
তো যেই সংখ্যাটা বিত্ত ও বিলাসের সময় আছে সেই ২৫% লোকের মধ্যেসাংস্কৃতিক নানা বিভাগের লোক আছে। এবং সেখানে দর্শক ও শ্রোতা একটা বড় অংশ। আমি ধরলাম ১৫% শতাংশ তারা নিজেরা কোন অংশ নেয়না কিন্তু সমর্থন করে পৃষ্ঠপোষকতা করে। এইভাবে ধরা যায় ২৫ কোটির ১০% মানে ২.৫ কোটি লোক নানা সাংস্কৃতিক দিক নিয়ে চর্চা করেন। এদের মধ্যে কর্পোরেট হাউস যারা টিভিতে ও নানা মাধ্যমে গান সিনেমা, নাচ নিয়ে ব্যবসা করে তাদের ২টি দিক আছে। একটা হল লোকালয় থেকে যে জলসা প্রতি গ্রাম, জেলা শহরে প্রদর্শিত হত তা ঊঠে গেছে কারণ দর্শক নিজের বাড়ির বা ঘরে বসে টিভি বা নানা বৈদ্যুতিন যন্ত্র চালিয়ে অনেক চিত্তবিনোদনের গান নাচ ও সিনেমা দেখতে পান। এবং জেনে রাখুন মহিলাদের উলংগ হবার স্বাধীনতা তারাই দিয়েছে। টিভি ও সিনেমার প্রভাব বিপজ্জনক। ফলে গান নাচ ও নাটক নিয়ে আগে যে পাড়ায় পাড়ায় জলসা হত তা হয়না, কেউ গায়ক নায়ক নাচিয়ে বাড়িতে চর্চা করা ছেড়ে দিয়েছে সবাই চায় তার নাচ টিভিতে হোক।


যারা টিভিতে সেরা হয় তারা বেশ ভাল রোজগার করে ঠিকই কিন্তু তাদের ভবিষ্যতে যদি ভিক্ষা করে খেতে হয়, আমি অবাক হবনা। এরকম খুব নামী সেলেব্রিটিকে ইতিমধ্যেই দারিদ্রের নীচতম রেখায় দেখা গেছে। বাংলায় উত্তম কুমারের সাথে নায়িকার চরিত্র অভিনয় করেও ভিখারির মত দেখা গেছে অনেককে। মেয়েদের তবু যতদিন যৌবন আছে, শরীর বিক্রী করে খেতে পারে। যেমন নায়িকাদের সেক্স রেকেট মাঝে মধ্যে পুলিশ ধরে তুলে আনে। বয়েস ৩৫/৪০ এর পর তাদের শরীর বিক্রী করেও টাকা রোজগার বা খদ্দের পাওয়া অসম্ভব।


এই হল একটা অন্ধকার দিক।
টিভিতে ও সিনেমায় যদি যৌনমোড়কীকরণ বন্ধ করা যেত তাহলে পাড়ার জলসাগুলি এতটা ধাক্কা খেতনা। কিন্তু অনেক আকাট (WOKE) মনে করেন মেয়েদের স্বাধীনতা প্রকাশ্যে যোনী প্রদর্শনও ঠিক আছে। এইভাবে আমাদের মূল্যবোধ স্বাধীনতার মাধ্যমে হারিয়ে যাচ্ছে।
এবার চলুন আদিম শিল্প ছবি ভাস্কর্য নিয়ে যারা কাজ করেন। তাদের দেখি।
বলা বাহুল্য বাংলাদেশে যে হারে হিন্দু নিপীড়ন চলছে, তা সভ্যতার নামে জঘন্য হিংস্রতা। বাংলাদেশ মুসলিম, ভারত ভাগ হয়ে জিন্নার দৌলতে মুসলিমরা ভেবেছিল তারা তাদের ধর্মকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই ভাবনাটা মুসলিমদের হীনমনস্কতা। শিক্ষার নিরিখে যে ধর্ম অশিক্ষিত বেশি , যারা নিজের শৃঙ্খল নিজে ভাংগতে পারেনা তাদের ৭৫ বছর পর ইদানীং দেখছেন কি হাল? তবু তারা বৈদ্যুতিক শক, ও নানা ধরণের বর্বরতার সাথে হিন্দু নিপীড়ন ও ধর্মান্তকরণ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধে যে ভাবে হিন্দু ঋণ খেয়েছে আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিম পাকিস্থানের মতন নয়। কিন্তু পৃথিবীতে মুসলিমদের কিছু বলতে পারবেননা, তারা অ-মুসলিমদের গলার নালী কাটতে অভ্যস্থ। পৃথিবীতে যত আতংকবাদ ও বর্বর কান্ড ঘটেছে যারা ধরা পড়ে তারা ৯৯% মুসলিম। তবু আপনি মুসলিমদের প্রতি তর্জনী তুলতে পারবেননা। পাকিস্থানে মুসলিমরা মুসলিমদের অন্যান্য ভাগগুলিকে যেমন সুন্নী, শিয়া ও আহমদী ইত্যাদী নানা শাখা আছে। ওখানে সুন্নী সম্প্রদায় বড় তারা নিপীড়ন চালায় Hindus, Pakistani Ahmadis, Shia, Sufis and Christians উপর। এ এক সাংঘাতিক রাস্ট্র পাকিস্থান। https://www.uscirf.gov/sites/default/files/Pakistan%20Factsheet.pdf
বাংলাদেশেও সুন্নীরা সংখ্যায় বড়। ফলে পাকিস্থানের মতই সেখানকার প্রভাব। এই মুহুর্তে ১.৩ কোটির কম হিন্দু নেই, মুষ্টিমেয় বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানরা সেই দেশে বাস করে, জনসংখ্যার প্রায় 8 শতাংশ; দেশভাগের আগে, ১৯৪১ সালের আদমশুমারি অনুসারে তারা প্রায় 30 শতাংশ গঠন করেছিল। (তথাগত রায় 18 অক্টোবর, 2021) অর্থাৎ বাংলাদেশে অ-মুসলিম থাকার কথা ২ভাগ মুসলিম ১ ভাগ অন্যান্য অ-মুসলিম। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৭ কোটি জনসংখ্যায় ১ কোটি ৩২ লক্ষ হিন্দু ও নিপীড়িত অবস্থায় আছেন।
(এখানে প্রতিটি তথ্য উইকিপিডিয়া, ও নানা বিশ্বস্ত তথ্যর থেকে নেওয়া, মনগড়া নয়, তবু যাচাই করে নিতে পারেন।)
ধর্মীয়ভাবে ইসলাম শিল্প সাহিত্যর প্রতি নানা নিষেধাজ্ঞা করে রেখেছে। ফলে সাংস্কৃতিক চর্চা তারাই করে যারা সুবিধাবাদী এবং নিজের স্বার্থের পর অন্যকে সমর্থন তারা দেবে এমন বিশ্বাস না করাই ভাল। তবু বাংলাদেশে ও পাকিস্থানে অনেক অবয়ব চিত্রী ও ভাস্কর তাদের দেশে বিখ্যাত। এই ধর্মীয় নিপীড়ন এবং সুন্নীসম্প্রদায় থেকে মাথা বাঁচিয়ে রাস্ট্র নিজেকে যতই বিশ্বের দরবারে দেখাকনা কেন মুসলিমদের প্রতি অবিশ্বাস অমুসলিমদের কখনোই মুছে যাবেনা।
ফিরে আসি ছবি ভাস্কর্যের কথায়। ২৫ কোটি বাংলাভাষীর হৃদয়, ও জীবনের উপলব্ধি এবং কাজের ধারা পুরো আলাদা। বাংলাদেশ তার বাংলাকে উর্দু শব্দ ও সংস্কৃতি মিশিয়ে চলছে আর পশ্চিমবংগের মানুষ ইংরেজদের পা-চাটা হয়ে চলছে। অর্থাৎ বাংলার উৎসভূমি ও প্রাচীন সংস্কৃতির যে মূল্য ছিল তা ধরে রাখার দায় কোন বাংলার নেই।
আমি তবু ধরে নিলাম বাংলাদেশে ২৫ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন আর্ট স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন এবং স্বশিক্ষিত বা কোন প্রতিষ্টিত শিল্পীর তত্ত্বাবধানে শিল্প ভাস্কর্যের চর্চা করেন। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও আর্ট কলেজ অনেক বেশি। একটা তালিকায় দেখছিলাম প্রায় ৩০ এর কাছাকাছি। পশ্চিমবংগে গোনা যায়। গভর্ন্মেন্ট আর্ট কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, ইন্ডিয়ান আর্ট কলে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে। আর বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন। খয়রাগড়(ছত্তিসগড়) এর অধীনে ডিগ্রী কলেজ ভিস্যুয়াল কলেজ অফ ক্যালকাটা, গড়িয়াতে আছে এছাড়া ব্যক্তিগত কিছু ডিপ্লোমা কলেজ আছে।
বাংলাদেশের চর্চার তুলনায় পশ্চিমবংগে একেবারেই দীন তবু স্বশিক্ষিত বলে অনেকে মানুষকে চিত্তাকর্ষণ করতে চান। এছাড়া গত ১০০ বছরে পশ্চিমবংগের শিল্পীদের একটা প্রভাব আছে। তবু ধরে নিলাম ১০ লক্ষ মানুষ ছোট বড় চিত্র-ভাস্কর্য নিয়ে কাজ করতে চান।

এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলিয়ে যদি আমি ধরি ২৫+১০=৩৫ লক্ষ লোক চিত্র ভাস্কর্য চর্চা করেন তাহলে তো ছবির ও ভাস্কর্যের একটা সুন্দর বাজার ও প্রচার হওয়ার কথা। এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলার নাম থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে আন্তর্জাতিক সীমানা থাক দূরে নিজেদের ঘরের সীমানাই বাংগালি ভাংগতে অক্ষম।
বাংলাতে ক’জন ছবি ভাস্কর্য সম্পর্কে উচ্চ আশা পোষণ করেন? কয়জন ছবি ভাস্কর্য কিনে শিল্পীর সহযোগিতা করেন?
না এগুলি নেই। কারণ আমাদের আর্ট স্কুল ও কলেজগুলি মান্ধাতার আমলের পঠন পাঠন ও ছাত্রদের সৃজনশীলতা বাড়াবার জন্য সমসাময়িক শিল্প নিয়ে লেকচার, ওয়ার্কশপ, বা অন্য কোন আগ্রহ প্রকাশ করেনা। প্রমোশন বা জনপ্রিয়তা বলে একটা কথা আছে। একটা বস্তুকে বিক্রয়যোগ্য করার জন্য উৎপাদন কারীকে নিজের দায়ে জনপ্রিয়তা লাভের কাজ কর্ম করতে হয়। এগুলি বাংলাতে নেই। যেটুকু বাংলাদেশে বিন্দুমাত্র আছে তা পশ্চিমবংগে নেই। এবং শিল্পীদের( ৩৫লক্ষ) ৯০ শতাংশ উদাসীন ও তারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এসেও তাদের কোন বিকাশ হয়নি। তাদের একটা বড় অংশ পড়াশুনা করে চাকরির জন্য। ফলে পরীক্ষায় নাম্বার ও সার্টিফিকেটেই সীমিত তাদের প্রতিভা।

সমাজে আর কিছু আছেন যাদের জীবিকা ছবি আঁকা ও (ভাস্কর্য নয়) মাটি গড়া। তারা হলেন পটুয়া আর কুমোর। পটোয়া আর কুমোররা পড়াশুনার একেবারেই ধার ধারেননা। তারা যন্ত্রের মত ছবি ও মূর্তী উৎপাদন করেন আর বিক্রী করেন একই ছাঁচের সব কখনো একটু আধটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অদল বদল করে। তারাও শিল্পী যশো প্রার্থী।

আর একটা বড় অংশ, হয়ত বড় বড় অফিসের ইগজিকিউটিভ। একটু কবি শিল্পী যশ পাবার জন্য বন্ধুবান্ধবী তৈরির জন্য কিছুদিন সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলি নিয়ে চর্চা করেন। সখ মিটে গেলে ছেড়ে দেন।
শিল্পী কবিদের উত্থানের যে কয়েকটা ধারা আছে- যেমন কলেজ থেকে পাশ করে শিল্পীরা নানা সংগঠনের বার্ষিক প্রদর্শনীতে যোগ দেয়। সেখানে নির্বাচিত হয়, এবং নানা স্থানে একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তারা উঠে, বা কবিরা ছোট ছোট পত্রিকাতে দীর্ঘদিন কবিতা পাঠিয়ে সম্পাদকের নির্বাচনে নিজের মেধার পরীক্ষা দিয়ে কবি হন এই যশো প্রার্থী বড় বড় মাইনের অফিসারররা কিন্তু তেমন নির্বাচিত নন, তারা হঠাৎ তাদের গাঁটের টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করল বা কোন একটা প্রদর্শনী করল। তারা রাতারাতি অন্যকে টেক্কা দিয়ে টাকার জোরে মহারাজ হতে চান।
তো এসব বাদ দিয়ে দেখা যাবে ৩৫ লক্ষের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার সৎ শিল্পী আছেন যারা পড়াশুনা করেন নিজের প্রতিভাকে ক্ষুরধার করার আপ্রাণ চর্চা করেন এবং জিতে যান।